বাংলার উৎসব রচনা | Banglar Utsab Rachana PDF

বাংলার উৎসব রচনা
বাংলার উৎসব রচনা

বাংলার উৎসব রচনা | Banglar Utsab Rachana : বাংলা উৎসবের তীর্থভূমি। এখানে বছরে অনেক উৎসব উদযাপিত হয়। তাই বাংলার উৎসব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখানে বাংলার উৎসব নিয়ে একটি রচনা শেয়ার করা হল। এখানে দেওয়া রচনাটি সকলেই ডাউনলোড করতে পারো।

Table of Contents ভূমিকা উৎসব কি উৎসবের শ্রেণীবিভাগ উৎসবের বিবর্তন উৎসবের প্রয়োজনীয়তা জাতীয় উৎসব ধর্মীয় উৎসব ঋতু উৎসব সামাজিক ও পারিবারিক উৎসব লোক উৎসব উৎসবের একাল সেকাল উপসংহার

ভূমিকা 

বাংলায় একটি বহু প্রচলিত কথা রয়েছে “বারোমাসে তেরো পার্বণ” । আমরা বাঙালিরা উৎসব প্রিয়। উৎসব যেন আমাদের রক্তের শিরায় শিরায় বয়ে চলেছে। দুর্যোগের কালো মেঘ কোন দিনই বাঙালির উৎসবে ভাটা ফেলতে পারেনি। সমস্ত বাঁধা অতিক্রম করে বাঙালিরা মেতে উঠে তাদের আনন্দ উৎসবে। 

উৎসব কি 

উৎসব হল মিলন। বহু মানুষের মিলনের সঙ্গমস্থল হল উৎসব। মানুষ তার দুঃখ, হতাশা, গ্লানি ভুলে আনন্দে মাতোয়ারা হবার নামই হল উৎসব।

উৎসবের শ্রেণীবিভাগ 

বাঙালীর উৎসবের ব্যাপকতা যেমন তেমনি প্রকারভেদও অনেক। উৎসবকে নিম্নলিখিত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। জাতীয় উৎসব ধর্মীয় উৎসব ঋতু উৎসব সামাজিক ও পারিবারিক উৎসব

উৎসবের বিবর্তন

সভ্যতার জন্ম লগ্ন থেকেই মানুষ উৎসব প্রিয়। আদিম যুগে মানুষ বিভিন্ন উৎসব পালন করে থাকত। তখনকার যুগে বেশিরভাগ উৎসবই ছিল প্রাকৃতিক শক্তি কেন্দ্রিক। মানুষ আগে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির উপাসনা করতো। ধীরে ধীরে যেমন অন্যান্য অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে তেমনি উৎসব উদযাপনের পদ্ধতিতেও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। 

উৎসবের প্ৰয়োজনীয়তা

কর্মব্যস্ত জীবন থেকে দূরে সরে একটু আনন্দের স্বাদ নেওয়ার জন্য সকলের মন চায়। কিন্তু গতিময় জীবন থেকে সরে এসে আনন্দ উল্লাস করা সকলের সুযোগ হয় না। কষ্টের জীবন থেকে কিছুটা স্বস্তির জন্য  মানুষের কাছে একটা অন্যতম উপায় হল উৎসব উদযাপন। জীবনে বাঁচতে গেলে যেমন পরিশ্রম করার প্রয়োজনীয়তা আছে তেমনি ক্লান্ত মনে আনন্দের ফুল ফোটাতে উৎসবের প্রয়োজন আছে। উৎসব শুধু মানুষকে মেলায় না মানুষের মনে জমে থাকা অনেক কষ্ট লাঘব করে। 

জাতীয় উৎসব 

ভারতবর্ষ এক বৃহৎ দেশ। এই দেশের বৈচিত্র্য সারা পৃথিবীর মানুষকে অবাক করে। এখানে যেমন বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বাস করে আবার তেমনি বহু ভাষা ভাষীর মানুষও বাস করে। তবে তাদের একটাই পরিচয় তারা হল ভারতীয়। সারা ভারতবর্ষ জুড়ে যে সমস্ত উৎসব পালন করা হয় সেগুলোই হল জাতীয় উৎসব। ভারতবর্ষে বহু মনীষী জন্মগ্রহণ করেছেন। এই সকল মনীষীদের জন্ম দিবস সারা ভারতে উৎসব আকারে পালন করা হয়। এছাড়া স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস প্রভৃতি দিনগুলো জাতীয় উৎসব হিসাবে পালন করা হয়ে থাকে। 

ধর্মীয় উৎসব 

ভরতে বিভিন্ন ধর্মের লোকজন বসবাস করে থাকে। হিন্দু, মুসলিম, শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান প্রভৃতি আরো অনেক ধর্মাম্বলীর মানুষ নিয়ে আমাদের ভারতবর্ষ। ভিন্ন ধর্মের আচার অনুষ্ঠান ও ভিন্ন ভিন্ন।  হিন্দুদের উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় উৎসবগুলি হল দুর্গাপূজা, দোলযাত্রা, রথযাত্রা, আরও অনেক। মুসলিমদের কিছু উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় উৎসব হল ঈদ, মহরম প্রভৃতি। এছাড়া অন্যান্য ধর্ম যারা অনুসরণ করে তাদেরও নিজস্ব অনেক ধর্মীয় উৎসব আছে।

ঋতু উৎসব 

জাতীয় উৎসব, ধর্মীয় উৎসবের পাশাপাশি বাঙালিরা বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন উৎসব উদযাপন করে থাকে। ঋতু উৎসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পৌষ পার্বণ, নবান্ন, নববর্ষ প্রভৃতি।

সামাজিক ও পারিবারিক উৎসব 

উৎসব প্রিয় বাঙালিরা বিভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে মেতে থাকে। সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিবাহ ভাতৃদ্বিতীয়া এছাড়া আরো অন্যান্য সামাজিক এবং পারিবারিক অনুষ্ঠানে আমরা খুব আনন্দ করি।

লোক উৎসব 

এখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করে। এছাড়া বিভিন্ন উপজাতির মানুষও বসবাস করে। লোক উৎসব সাধারণত এখানে বসবাসকারী উপজাতিদের মধ্যে দেখা যায়। যেমন টুসু বাদুয়া খুবই লোক উৎসব। 

উৎসবের একাল সেকাল 

সময়ের সাথে সাথে উৎসবের ধরন অনেক পাল্টে গেছে। আগে সাধারণত উৎসব হতো ধর্ম কেন্দ্রিক আড়ম্বর হীন। কিন্তু বর্তমানে যে সমস্ত উৎসব অনুষ্ঠিত হয় তার বেশিরভাগই আড়ম্বরপূর্ণ। এখনকার যুগে অনুষ্ঠানগুলোতে মানুষ আনন্দে মেতে উঠতে ভালোবাসে। তাই এখনকার অনুষ্ঠানের খরচ আগের থেকে অনেক গুণ বেড়ে গেছে।

উপসংহার

বাঙালিরা আনন্দ করতে ভালোবাসে। সে যত দুঃখ আসুক যতই কষ্ট আসুক তারা উৎসবে মেতে উঠতে পারে। উৎসবের সময় তারা সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে আনন্দে মেতে উঠে। উৎসবের মূল উদ্দেশ্য হলো মিলন যেখানে থাকবে না কোন জাতির ভেদাভেদ কোন সম্প্রদায়ের ভেদাভেদ। বিশেষ করে আমাদের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান দূর্গা পূজার সময় সমস্ত ধর্মের সমস্ত জাতির মানুষ একত্রিত হয় ও দুর্গাপূজা উপভোগ করেন এবং আনন্দে মেতে ওঠেন।